যোগানন্দজি ১৯১৭ তে ছেলেদের জন্য একটি “আদর্শ জীবনযাপন” শিক্ষার বিদ্যালয় স্থাপনের মধ্যে দিয়ে তাঁর জীবনের প্রথম কাজ শুরু করেন, এই বিদ্যালয়ে আধুনিক শিক্ষা পদ্ধতির সঙ্গে মিলিয়ে যোগ শিক্ষা এবং আধ্যাত্মিক আদর্শের প্রশিক্ষণও দেওয়া হত। কাশিমবাজারের মহারাজা রাঁচিতে তাঁর গ্রীষ্মকালীন প্রাসাদটিকে (কলকাতা থেকে ২৫০ মাইল দূরে অবস্থিত) বিদ্যালয় নির্মাণের স্থান নির্বাচিত করে ব্যবহার করার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। কয়েকবছর পরে এই বিদ্যালয় পরিদর্শনে এসে মহাত্মা গান্ধী লিখেছিলেন: “এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি আমার মনকে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে।”
১৯২০ তে একদিন রাঁচি বিদ্যালয়ে ধ্যান করার সময়, যোগানন্দজির একটি দিব্য দর্শনে দেখেন পাশ্চাত্যে কাজ শুরু করার এটাই আদর্শ সময়। তিনি সঙ্গেসঙ্গে কলকাতার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। আসার পরের দিনই সেখানে তাঁকে সেই বছরের শেষের দিকে বস্টনে আয়োজিত ধর্মীয় নেতাদের আন্তর্জাতিক কংগ্রেসের সম্মেলনে ভারতবর্ষের প্রতিনিধিত্ব করতে আমন্ত্রণ জানানো হয়। শ্রীযুক্তেশ্বরজি যোগানন্দজিকে এখনই সঠিক সময় সে বিষয়ে নিশ্চিত করে বলেন “তোমার জন্য সব দরজা খোলা রয়েছে। হয় এখন অথবা আর কখনও নয়।”
পাশ্চাত্য যাত্রার কদিন আগে অমরগুরু মহাবতার বাবাজি যিনি এই যুগে প্রাচীন ক্রিয়াযোগ বিজ্ঞানকে পুনর্জীবন দিয়েছিলেন, যোগানন্দজির সঙ্গে দেখা করেন।বাবাজি যোগানন্দজিকে বলেন “তুমিই সেই যাকে আমি পাশ্চাত্যে ক্রিয়াযোগের বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্যে মনোনীত করেছি। অনেক দিন আগে কুম্ভমেলায় তোমার গুরু যুক্তেশ্বরের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছিল; আমি তখন তাকে বলেছিলাম প্রশিক্ষণের জন্যে আমি তোমাকে তার কাছে পাঠাব। ক্রিয়াযোগ হল ঈশ্বর লাভের বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি যা শেষপর্যন্ত সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়বে এবং মানুষের অন্তরে অনন্ত পরমপিতার ব্যক্তিগত অতীন্দ্রিয় উপলব্ধির মাধ্যমে সব দেশের মধ্যে সৌহার্দ্য স্থাপনের সহায়ক হবে।”
সেই যুবক ধর্মগুরু ১৯২০-র সেপ্টেম্বরে বোস্টনে পদার্পণ করেন। আন্তর্জাতিক কংগ্রেসের উদারমনস্ক ধর্মগুরুদের অধিবেশনে তাঁর প্রথম বক্তৃতা ছিল “ধর্ম-বিজ্ঞান” এবং তা বিপুলভাবে সমাদৃত হয়েছিল। সেই বছরই তিনি ভারতবর্ষের প্রাচীন যোগ বিজ্ঞান, দর্শন এবং কালজয়ী ধ্যানের ঐতিহ্যকে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য সেল্ফ-রিয়লাইজেশন ফেলোশিপ প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথম এসআরএফ ধ্যানকেন্দ্রটি ডক্টর এবং শ্রীমতি এম. ডাবলু. লিউইস এবং শ্রীমতি অ্যালিস হ্যাসে (যোগমাতার ভগিনী) যারা পরে সারাজীবনের মত শিষ্য হন, তাঁদের সহায়তায় বোস্টনে শুরু হয়।
পরবর্তী কয়েক বছর তিনি পূর্ব উপকূলে শিক্ষা এবং বক্তৃতা দেন এবং ১৯২৪-এ তিনি সারা মহাদেশ ব্যাপী একটি বক্তৃতা সফরে বের হন। ১৯২৫ এর প্রথম দিকে লস অ্যাঞ্জেলসে পৌঁছে তিনি সেখানে মাউন্ট ওয়াশিংটনের চূড়োয় সেল্ফ-রিয়লাইজেশন ফেলোশিপের জন্য একটি আন্তর্জাতিক সদর দপ্তর স্থাপন করেন যেটি তাঁর ক্রমবর্ধমান কাজের মুল আধ্যাত্মিক এবং প্রশাসনিক কেন্দ্র হয়ে ওঠে।