শ্রদ্ধাঞ্জলি – স্বামী হিতেশানন্দ গিরি (১৯৫৩-২০২১)

১৩ মে, ২০২১

আমরা আপনাদের জানাতে চাই যে, আমাদের পূজ্য গুরুদেবের যোগদা সৎসঙ্গ সোসাইটি অফ ইন্ডিয়ার একজন প্রবীণ সন্ন্যাসী শিষ্য, আমাদের শ্রদ্ধেয় স্বামী হিতেশানন্দ গিরি, ১১ মে ২০২১-এ শান্তিপূর্ণভাবে পরলোক গমন করেছেন। কোভিড লক্ষণের প্রথম ইঙ্গিত পাওয়ার পর তাঁকে রাঁচির একটি স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে তার করোনাভাইরাস পরীক্ষার ফলাফল পজিটিভ আসে। যদিও তিনি সর্বোত্তম চিকিৎসায় কয়েকদিনের জন্য চিকিৎসাধীন ছিলেন, স্বামী হিতেশানন্দের শারীরিক অবস্থার ধীরে ধীরে অবনতি ঘটে এবং তাঁর দেহাবসান হয়।

বিহার রাজ্যের ছাপরা জেলা থেকে আগত স্বামী হিতেশানন্দের জন্ম নাম ছিল গোবর্ধন প্রসাদ। উচ্চশিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সন্ধানে যুবা বয়সে তিনি নয়াদিল্লিতে আসেন। কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে—দিনে বিভিন্ন কাজে কর্মরত থেকে এবং রাতে নৈশ কলেজে অধ্যয়ন করে, গোবর্ধন প্রসাদ ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করতে পেরেছিলেন। পরে তিনি দিল্লি ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (ডিডিএ) একটি সরকারি চাকরি গ্রহণ করেন এবং আর্থিক নিরাপত্তায় প্রতিষ্ঠিত থাকায় তিনি তার দুই ভাইকে দিল্লিতে নিয়ে আসার সুযোগ পান এবং তাদের অব্যাহত শিক্ষার ব্যবস্থা করেন।

তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রম ও অটল অঙ্গীকারের সংমিশ্রণ, অন্যদের সবসময় সাহায্য করার মানসিকতা, তাঁর জীবনের সংস্পর্শে আসা প্রতিটি মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে একটি উজ্জ্বল উদাহরণ তৈরি করেছিল।

ডিডিএ-এর একজন কর্মচারী থাকাকালীন, গোবর্ধন প্রসাদ ইতিমধ্যেই পরমহংস যোগানন্দের ওয়াইএসএস শিক্ষা অনুসারে আধ্যাত্মিক সাধনা শুরু করে দিয়েছিলেন। সেই নীতিগুলির প্রতি তাঁর দৃঢ় অনুসরণের মাধ্যমে, তিনি কঠোর পরিশ্রমী, অন্তরে সৎ এবং ন্যায়পরায়ণতার সুনাম অর্জন করেছিলেন। তাঁর উজ্জ্বল চরিত্র এবং উচ্চ নীতিসমূহ অনেক সহকর্মীর ওপর একটি স্থায়ী প্রভাব ফেলেছিল। তাদের মধ্যে কিছু সহকর্মী তাঁর পদক্ষেপ অনুসরণ করেন এবং অবশেষে উদ্দীপ্ত ও অনুগত শিষ্য হয়ে ওঠেন।

স্বামী হিতেশানন্দ গিরি ১৯৮৬-তে যোগদা সৎসঙ্গ সন্ন্যাস ক্রমে একজন প্রবেশার্থী হয়ে যোগদান করেন। ১৯৯৫-তে রাঁচি আশ্রমে তিনি ব্রহ্মচর্য দীক্ষা লাভ করেন, এবং ২০০৪-এ তিনি লস অ্যাঞ্জেলসের এসআরএফ আন্তর্জাতিক সদর দপ্তরে সন্ন্যাস দীক্ষা গ্রহণ করেন।

যোগদা সৎসঙ্গ সন্ন্যাসী শিষ্য হিসেবে বহু দশকব্যাপী সেবার মাধ্যমে, স্বামী হিতেশানন্দ গুরুদেবের রাঁচি, দক্ষিণেশ্বর, দ্বারহাট এবং নয়ডা আশ্রমে বিভিন্ন দায়িত্বে সেবা প্রদান করেছেন। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হল রাঁচির সুন্দর স্মৃতি মন্দির এবং ধ্যান মন্দির ভবনের নির্মাণে তাঁর সহায়তা। তাঁর জীবনের শেষভাগে, স্বামীজি আমাদের পত্রবিনিময় বিভাগে সেবা প্রদান করেন, যেখানে গুরুদেবের শিক্ষার প্রতি তাঁর গভীর জ্ঞান অসংখ্য ভক্তদের আধ্যাত্মিক পরামর্শের জন্য অত্যন্ত উপযোগী ছিল। লিখিত উত্তরের পরিবর্তে যখন টেলিফোনে পরামর্শ বহুলভাবে ব্যবহৃত হতে শুরু করে, ভক্তদের অনুরোধ ও প্রয়োজনীয়তার জন্য স্বামী হিতেশানন্দ যে কোনো সময় ফোন কল গ্রহণের জন্য উপলব্ধ থাকতেন৷ তাঁর বাস্তবোচিত পরামর্শ, সবসময় তাঁর গুরুর শিক্ষার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ এবং সমন্বয়ে ছিল।

স্বামী হিতেশানন্দের ঈশ্বর ও গুরুদেবের প্রতি সারা জীবনের উৎসর্গীকৃত এবং একনিষ্ঠ সেবাপরায়ণতার যে ভাব প্রকাশ পেয়েছিল তার থেকে আমরা সর্বদা প্রেরণা লাভ করতে থাকব। যদিও সকল ওয়াইএসএস সন্ন্যাসী, সেবক এবং ভক্তরা তাঁর শারীরিক উপস্থিতির অভাব অনুভব করবেন, আমরা সান্ত্বনা পাই এই জেনে যে স্বামী হিতেশানন্দের আত্মা এখন সমস্ত দেহগত সীমাবদ্ধতা থেকে মুক্ত হয়ে জগৎমাতার ও আমাদের মহান গুরুগণের জ্যোতি ও প্রেমে স্নাত হচ্ছে।

আমাদের ধ্যানের সময়, আসুন আমরা আমাদের হৃদয় খুলে স্বামী হিতেশানন্দকে আমাদের ভালোবাসা এবং প্রার্থনা প্রেরণ করি, কারণ তিনি তাঁর সর্বব্যাপীত্বের গৃহের দিকে তাঁর অধ্যাত্ম যাত্রা অব্যাহত রেখেছেন।

এই শেয়ার করুন