পরমহংস যোগানন্দজির শেষ বছরগুলি প্রধানত একান্তবাসে কেটেছিল, তিনি তখন তাঁর লেখালেখির কাজের জন্য কঠোর পরিশ্রম করছিলেন — এরমধ্যে ছিল ভগবদ গীতা এবং চারটি গসপেলে বিভক্ত জিশু খ্রিষ্টের শিক্ষার ওপর তাঁর বৃহদায়তন ভাষ্য , এর সঙ্গে ছিল তাঁর আগের রচনা হুইস্পার ফ্রম ইটারনিটি এবং যোগদা সৎসঙ্গ পাঠমালার সংশোধনের কাজ। এছাড়াও তিনি তখন শ্রী দয়ামাতা , শ্রী মৃণালিনী মাতা এবং তাঁর আরো কিছু ঘনিষ্ঠ শিষ্যদের সঙ্গে বিস্তারিতভাবে কাজ করছিলেন, তাদের আধ্যাত্মিক এবং সংগঠনের কাজ করার নির্দেশ দিতেন যাতে তাঁর পরেও তাঁর বিশ্বব্যাপী কাজ তারা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন।
তিনি তাদের বলেছিলেন:
“আমার দেহ চলে যেতে পারে কিন্তু আমার কাজ এগিয়ে চলবে। আর আমার আত্মা জীবিত থাকবে। এমনকি যখন আমাকে নিয়ে নেওয়া হবে তখনও আমি পৃথিবীর উদ্ধারের জন্যে ঈশ্বরের বার্তাবাহক হয়ে তোমাদের সঙ্গে কাজ করব ।
“যারা সেল্ফ-রিয়লাইজেশন ফেলোশিপ [যোগদা সৎসঙ্গ সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া] তে বাস্তবিক নিজেদের অন্তরের আধ্যাত্মিক সহায়তার জন্যে এসেছে , তারা ঈশ্বরের থেকে যা চাইবে তাই পাবে। আমি দেহে থাকতে তারা আসুক বা তারপর, এসআরএফ [ওয়াইএসএস] গুরুদের সূত্র ধরে ঈশ্বরের শক্তি ভক্তদের মধ্যে একইভাবে প্রবাহিত হবে এবং তাদের মুক্তির কারণ হবে। অমরগুরু বাবাজি মহারাজ সমস্ত এসআরএফ [ওয়াইএসএস] এর আন্তরিক ভক্তদের রক্ষা করার এবং তাদের উন্নতির জন্য সাহায্য করার অঙ্গীকার করেছেন। লাহিড়ী মহাশয় এবং শ্রী যুক্তেশ্বরজি যাঁরা শরীর ছেড়ে চলে গেছেন এবং আমিও , এমনকি আমার দেহত্যাগ করার পরেও — আমরা সকলেই চিরদিন আন্তরিক এসআরএফ[ওয়াইএসএস] ভক্তদের রক্ষা করব এবং সাহায্য করব।”
১৯৫২-র ৭ই মার্চ , মহান গুরু মহাসমাধিতে লীন হন , ঈশ্বরপ্রাপ্ত গুরুর পার্থিব শরীর ত্যাগের সময় দেহ থেকে সজ্ঞানে প্রস্থান । লস অ্যাঞ্জেলসের বিল্টমোর হোটেলে আমেরিকায় ভারতের রাষ্ট্রদূত ডঃ বিনয় আর. সেন এর সম্মানে আয়োজিত সভায় তিনি সদ্য একটি ছোটো বক্তৃতা দেওয়া শেষ করেছিলেন ।
তাঁর চলে যাওয়ার সময় একটি অসাধারণ ঘটনা ঘটেছিল। ফরেস্ট লন মেমোরিয়াল পার্কের ডিরেক্টর সাক্ষরিত একটি প্রমাণপত্র অনুসারে: “তাঁর মৃত্যুর এমনকি ২০ দিন পরেও তাঁর দেহে কোনো বিকৃতি দেখা যায় নি। এই নিখুঁত দেহ সংরক্ষণ আমরা যতদূর জানি শবাগারের ইতিহাসে একটি অদ্বিতীয় ঘটনা। যোগানন্দজির দেহ আপাতদৃষ্টিতে বিস্ময়কর রকমের অপরিবর্তিত অবস্থায় ছিল”।
অনেকদিন আগেই, পরমহংস যোগানন্দজির গুরু স্বামী শ্রীযুক্তেশ্বরজি তাঁকে দিব্য প্রেমের অবতার রূপে উল্লেখ করেছিলেন। পরে তাঁর শিষ্য এবং প্রথম আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকারী রাজর্ষি জনকানন্দ তাঁকে সার্থকভাবে প্রেমাবতার বা “দিব্য প্রেমের অবতার ” উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন ।
পরমহংস যোগানন্দজি দেহ রাখার ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে ভারত সরকার মানবতার আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্যে তাঁর সুদূরপ্রসারী অবদানের সরকারি স্বীকৃতি দেন । তাঁর সম্মানে একটি স্মারক ডাকটিকিটও প্রকাশ করা হয় , এর সঙ্গে একটি শ্রদ্ধাজ্ঞাপক বার্তাও দেওয়া হয় তার কিছু অংশ দেওয়া হল:
পরমহংস যোগানন্দজির জীবনে আদর্শ ঈশ্বর প্রেম ও মানব সেবা পরিপূর্ণ ভাবে প্রকাশিত হয়েছে । যদিও জীবনের অধিকাংশ সময় তিনি ভারতবর্ষের বাইরে কাটিয়েছেন তবুও আমাদের মহান সাধু পরম্পরায় ওনারও স্থান আছে। তাঁর কর্মধারা ক্রমাগত বর্ধিত এবং উজ্জ্বলতর হয়ে উঠছে, আত্মার এই তীর্থযাত্রায় সারা পৃথিবীর মানুষকে আকর্ষিত করছে।
২০১৭-তে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী মাননীয় শ্রী নরেন্দ্র মোদী নতুন দিল্লীতে একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে পরমহংসজির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। সেই অনুষ্ঠানে ভারত সরকার যোগদা সৎসঙ্গ সোসাইটির শততম বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষ্যে একটি নতুন স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করেন। পরমহংস যোগানন্দজির মহাসমাধির বর্ষপূর্তি দিবসকে সম্মান জানানোর জন্যেই তাঁরা ২০১৭-র ৭ই মার্চ এই দিনটিকে বেছেছিলেন।
তাঁর অনুপ্রাণিত ভাষণে, প্রধানমন্ত্রী পরমহংসজিকে ভারতবর্ষের একজন অন্যতম মহান যোগী এবং শিক্ষক নিরূপিত করেছেন—যাঁর জীবন এবং কাজ সারা পৃথিবীর কাছে ভারতবর্ষের আধ্যাত্মিকতার অসাধারণ গুরুত্ব প্রদর্শন করেছে। তিনি, আধুনিক যুগেও ভারতবর্ষের প্রাচীন ঐতিহ্যকে ছড়িয়ে দিতে এবং প্রতিষ্ঠাতার ভাবধারা ও উত্তরাধিকার সাফল্যের সঙ্গে বজায় রাখার জন্যে ওয়াইএসএস এর প্রশংসা করেছেন।