প্রিয় ভক্তগণ,
আমার প্রিয় ভারতবর্ষের এত মানুষকে এই কোভিড অতিমারীর কবলে পড়তে দেখে, আমি চাই আপনারা জানুন, আমার গভীরতম প্রার্থনায় আমি সেই মহান জ্যোতি এবং ঈশ্বরের আশীর্বাদ অনুভব করি যা আপনাদের ঘিরে রেখে সুরক্ষা দিচ্ছে এবং আমাদের বিশ্ব পরিবার বিধ্বস্তকারী ব্যাধিকে দ্রুত ধ্বংস করছে।
এই অতিমারী আপনাদের এবং সমাজ জীবনে বহু ঘোরতর বিপদ নিয়ে এসেছে জেনে আমার মন আপনাদের জন্যে কাঁদছে। ঈশ্বর এই পরীক্ষা পৃথিবীর ওপর চাপিয়ে দেননি বরং এ হল মনুষ্যজাতির অলক্ষ্যে জমে ওঠা নিজসৃষ্ট গণকর্মের প্রভাব। তা সত্ত্বেও ঈশ্বরের প্রিয় সন্তান রূপে আমরা যদি তাঁর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে চলি , আমাদের যে বিপদের মুখোমুখিই পড়তে হোক না কেন আমরা তাঁর অদৃশ্য হাত এবং আমাদের মধ্যে তাঁর চিরপ্রেমময় উপস্থিতি অনুভব করতে পারব। আমি আপনাদের অন্তরের শান্তি এবং বিশ্বাস ধরে রেখে এই সত্যে অবিচল থাকার জন্যে প্রণোদিত করছি যে ঈশ্বরের প্রেম এবং শক্তি আমাদের এই ভীষণ পরীক্ষার শেষদিন অব্দি আমাদের রক্ষা করবে কারণ তিনিই আমাদের সুরক্ষার শ্রেষ্ঠ আশ্রয়, বিপদ থেকে চরম নিরাপত্তা ও আরোগ্যের পথে আমাদের চিরদিনের পথপ্রদর্শক।
আমরা যখন এমন পরিস্থিতির স্বীকার হই যা আমাদের বাইরের স্থিতিশীলতা বা ভাল থাকাকে বিপন্ন করে ,তার মুখোমুখি হওয়ার জন্যে আমি আপনাদের সব ভয় এবং নিরাপত্তাহীনতাকে সজ্ঞানে এই উপলব্ধিতে নিয়ে আসতে উৎসাহিত করছি যে আমাদের সকলের সর্বশক্তিমান পিতা/মাতা আপনার এখানে আপনার পাশে আছেন। এর সঙ্গে বারবার জোরের সঙ্গে পরমহংস যোগানন্দজির কথাগুলি দৃঢ় প্রত্যয়ের সঙ্গে বলতে থাকুন –“ আমি ঈশ্বরের সান্নিধ্যে সুরক্ষিত। আমার কোন ক্ষতি হতে পারে না, কারণ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে –দৈহিক, মানসিক, অর্থনৈতিক, আধ্যাত্মিক – আমি ঈশ্বর সান্নিধ্যের আশ্রয়ে সুরক্ষিত”।
আমাদের সত্ত্বাকে অপরাজিত এবং অক্ষত রেখে এই সংকটকাল অতিক্রম করতে ধ্যানই হল আমাদের সবচেয়ে বড় ভরসা এবং শ্রেষ্ঠ সুরক্ষাকবচ। আমরা অল্প সময়ের জন্যে হলেও যতবার পারি ঈশ্বরের প্রতি নিজেদের হৃদয়কে যখনই উন্মুক্ত করি তাঁর আরোগ্যকারী প্রেম এবং অটল জ্ঞান আমাদের শান্ত করে এবং ধরে রাখে। সমস্ত সন্দেহ এবং অনিশ্চয়তাকে অতিক্রম করে আমাদের অন্তরের শক্তিকে পুনরায় জাগিয়ে তোলে এবং আমাদের চেতনাকে উত্থিত করে। এইভাবেই আমরা নিজেদের মধ্যে সেই সাহস এবং সজ্ঞালব্ধ অভিমুখ পেয়ে থাকি যা আমাদের সেই পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্যে সঠিক কর্মপদ্ধতির দিকে নিয়ে যায়।
যেকোন প্রতিকূলতার মুখোমুখি হওয়ার জন্যে গুরুদেব আমাদের এক সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়েছেন – “ নেতিবাচক পরিস্থিতির মধ্যে চিন্তা ও কর্মের দ্বারা এক সদর্থক এবং গঠনমূলক পদ্ধতিতে তার বিপরীতভাব অভ্যাস করুন। ‘তিতিক্ষা’ অভ্যাস করুন , যার অর্থ হল অপ্রীতিকর পরিস্থিতির কাছে হার না মানা বরং মানসিকভাবে ভেঙ্গে না পড়ে তাকে প্রতিহত করা। অসুস্থতা এলে নিজের মনকে বিচলিত হতে না দিয়ে জীবনযাত্রার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন । অবিচলিত থেকে আপনার সব কাজ করুন”।
প্রিয় ভক্তজনেরা, আশ্বস্ত থাকুন, আমাদের গুরুদেবের সমস্ত ওয়াই এসএস /এসআরএফ আশ্রমের সকল সন্ন্যাসী সন্ন্যাসিনীরা আমার সঙ্গে গভীর প্রার্থনায় যোগ দেন, ভারতবর্ষ এবং সমগ্র বিশ্বে আপনাদের প্রত্যেকের জন্যে আরোগ্যকারী জ্যোতি এবং অনুপ্রেরণাদায়ী প্রেমপূর্ণ ভাব পাঠিয়ে থাকেন। প্রত্যেকের যাদের ঈশ্বরের কৃপা এবং আশীর্বাদের প্রয়োজন তাদের আরোগ্যকারী স্পন্দন পাঠানোর জন্যে দয়া করে আপনারা আমাদের প্রার্থনার সঙ্গে আপনাদের যোগদান বজায় রাখুন। নিজেদের প্রশান্ত দৃষ্টান্ত দ্বারা একে অপরকে সাহায্য করে, আমাদের চারপাশে যারা আছেন তাদের উন্নয়ন সাধন করে, এবং অফুরান শক্তি ও সাহসের উৎস থেকে নিজেরা শক্তি সঞ্চয় করে আমরা একসঙ্গে এই কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে বিজয়ীর মতো চলার পথ খুঁজে পাব।
ঈশ্বর এবং গুরু আপনাদের আশীর্বাদ করুন , পথ দেখান এবং আপনার ও আপনার পরিবারের ওপর তাঁর কৃপাদৃষ্টি বজায় রাখুন।
স্বামী চিদানন্দ গিরি