তোমার চিত্ত আমাতেই নিবিষ্ট করো, আমার ভক্ত হও, আমার পূজা করো এবং আমাকে প্রণাম করো; এইভাবে তোমার হৃদয় আমাতেই স্থির হলে, আমাকেই পরম গতিরূপে গ্রহণ করলে, তুমি আমাকেই লাভ করবে।
— গড টক্স উইথ অর্জুন: দ্য ভগবদ্গীতা
প্রিয় আত্মন,
ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব দিবস এই শুভ জন্মাষ্টমী উপলক্ষ্যে আমরা বিশ্বের লক্ষ লক্ষ ভক্তের সঙ্গে মিলিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছি যাদের হৃদয় তাঁর সর্বব্যাপী প্রেম ও প্রজ্ঞার প্রতি নতুন করে আকৃষ্ট হয়ে চলেছে। ঈশ্বরপ্রদত্ত যোগবিজ্ঞান প্রয়োগের মাধ্যমে যে মায়া ও পরাজয়সুলভ মানসিকতাকে হারিয়ে আত্মার জয়লাভ সুনিশ্চিত হতে পারে, সে সম্বন্ধে তাঁর চিরন্তন প্রতিশ্রুতি যেন নতুন করে সাহস ও অনুপ্রেরণা জুগিয়ে এক দিব্যজীবন লাভের জন্য আমাদের উদ্বুদ্ধ করে।
ভগবদ্গীতায় শিষ্য অর্জুনকে লক্ষ্য করে পরম করুণাময় ঈশ্বর শ্রীকৃষ্ণের মাধ্যমে সহজ অথচ মুক্তিদায়ী এই উপদেশটি উচ্চারণ করেছেন: “তুমি তোমার চেতনাকে সর্বদাই আমার উপস্থিতির নিরাপদ আশ্রয়ের মধ্যে আবদ্ধ রেখো।” অর্জুনের প্রতি উচ্চারিত হলেও এই উপদেশ সর্বযুগে সকল একনিষ্ঠ ভক্তের প্রতিই প্রযোজ্য। ধ্যানের মাধ্যমে আমাদের হৃদয় ও মনকে বার বার তাঁর সেই শাশ্বত আশ্রয়ে ফিরিয়ে এনে আমরা আত্মার ওপর মায়ার অবরোধকারী প্রভাব এবং মানবীয় সীমাবদ্ধতার দ্বারা নিজেদের সীমিত করে রাখার প্রবণতাকে বাস্তবিকই লাঘব করতে পারি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, আমরা আমাদের ভক্তির দেবালয়ে একাগ্রচিত্তে আমাদের সেই পরম সখার সঙ্গে তৃপ্তিমধুর একটি সম্বন্ধ প্রতিষ্ঠা করতে পারি, যিনি আমাদের কুরুক্ষেত্ররূপ জীবনসংগ্রামে সবচেয়ে আকাঙ্ক্ষিত পথপ্রদর্শক এবং উপকারী বন্ধু হয়ে দেখা দেন।
গীতায় ব্যাখ্যা করা হয়েছে কীভাবে যোগেশ্বর শ্রীকৃষ্ণের নিঃশর্ত প্রেম ও আশীর্বাদ অর্জুনের মতো একজন মহৎপ্রাণ ব্যক্তিকে যিনি সাময়িকভাবে হলেও বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছিলেন, তাঁকে তাঁর বিহ্বলদশা থেকে জাগিয়ে তুলেছিলেন। জন্মাষ্টমী উদযাপন করার সঙ্গে সঙ্গে আমি প্রার্থনা করি যে, আপনাদের জীবনও যেন একইভাবে রূপান্তরিত হয়। আত্মাকে নতুন করে সঞ্জীবিত করার জন্য গীতোক্ত সত্যবাণীকে পরমহংস যোগানন্দ যেভাবে নতুন ব্যাখ্যার আলোকে উদ্ঘাটিত করেছেন, তার সঙ্গে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দেওয়া রাজযোগের বিভিন্ন প্রক্রিয়া সম্বন্ধে যদি আপনারা গভীরভাবে চিন্তা করেন, তাহলে নিশ্চিতভাবেই এটা ঘটতে পারে। আজকের এই আধুনিক যুগে ঈশ্বরের বিশ্বব্যাপী পরিবারের সকলের জন্য আমাদের গুরুদেব রাজযোগের ওইসব পবিত্র পদ্ধতি প্রকাশ করেছেন।
আমাদের সামনে আজ কী বিশাল এক সুযোগ এসে উপস্থিত হয়েছে! এটা যেন কখনোই ভুলে যাবেন না। শ্রীকৃষ্ণের শিষ্য অর্জুন যেমন চূড়ান্ত সাফল্য অর্জন করেছিলেন, তেমনই আমরাও অদম্য সাহস এবং অন্তর্জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে বর্তমানে আমাদের জীবনে আলো বনাম অন্ধকারের যে যুদ্ধ চলেছে, তাতে আমরা প্রত্যেকেই মুক্তিলাভ করতে পারি।
শ্রীকৃষ্ণের এই আবির্ভাব দিবসের উদ্যাপন যেন আমাদের প্রত্যেকের মধ্যেই ধ্যানলব্ধ এই বোধশক্তি নতুনভাবে জাগিয়ে তোলে যে, এই পৃথিবী দিতে পারে এমন যে কোনো কিছুর চাইতেও ঈশ্বরীয় প্রেম অনেক বেশি বাস্তব, অনেক বেশি স্থায়ী এবং যে কোনো সময়েই আমরা যেন তাঁর স্বতঃস্ফূর্ত সাহায্য, তাঁর নিঃসংশয় বন্ধুত্ব এবং তাঁর অতীব প্রেমময় উপস্থিতির কাছে দ্বিধাহীনচিত্তে পৌঁছোতে পারি।
জয় শ্রীকৃষ্ণ! জয় গুরু!
স্বামী চিদানন্দ গিরি